অমরেন্দ্র চক্রবর্তী-র চিত্রকলা বিষয়ে
-
পরিব্যাপ্ত শূন্যতায় ফুটেছে সৌন্দর্যের আকুতি
মৃণাল ঘোষ
অমরেন্দ্র চক্রবর্তী তাঁর ছবি নিয়ে দ্বিতীয় একক প্রদর্শনী করলেন সম্প্রতি আইসিসিআর-এর অবনীন্দ্র গ্যালারিতে। শ্রীচক্রবর্তী সংস্কৃতির জগতে একজন সুপরিচিত মানুষ। একাধারে তিনি কবি, কথা-সাহিত্যিক এবং সম্পাদক। শিশু সাহিত্যিক হিসেবেও তিনি প্রতিষ্ঠা অর্জন করেছেন। তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘কালের কষ্টিপাথর’, ‘ছেলেবেলা’, ‘কর্মক্ষেত্র’, ‘ভ্রমণ’ ইত্যাদি পত্রিকা। ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সাতটি কবিতার বই, ২১টি কথা-সাহিত্য বিষয়ক বই, যার মধ্যে ১৩টি ছোটদের জন্য। ভ্রমণেও তিনি উৎসাহী। মধ্য আফ্রিকার গভীর বনাঞ্চল রোয়ান্ডা ও উগান্ডায় ভ্রমণ করে বন্য প্রাণীর ছবি তুলেছেন। তা সত্ত্বেও একটি বিশেষ প্রকাশনার জন্য তিনি স্মরণীয়। ষাটের দশকে তিনি সম্পাদনা করেছেন ‘কবিতা-পরিচয়’ পত্রিকা। সেখানে বিখ্যাত এক একটি কবিতা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করতেন খ্যাতনামা কবি ও লেখকরা। কবিতা চর্চার ক্ষেত্রে এই পত্রিকা গভীর অভিঘাত সৃষ্টি করেছিল।
-
বিষাদ থেকে অসীমে পাড়ি
কুরচি দাশগুপ্ত
আশির দশকের কলকাতায় ‘হীরু ডাকাত’-এর নাম না শুনে বা না পড়ে কে বেড়ে উঠেছে! পরবর্তী কালে লেখকের বেশ কিছু কাজ ইংরেজিতে তরজমা করতে পেরে নিজে সম্মানিত বোধ করেছি। এই সম্মান এসেছিল ব্যক্তিগত সম্পর্কের সূত্র ধরে: আমি ছিলাম তাঁর ছোট মেয়ে মৈত্রেয়ীর বন্ধু। সেইসঙ্গে সেসময় আমি ও মৈত্রেয়ী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের ছাত্রী, যেখানে বহু বছর আগে অমরেন্দ্র চক্রবর্তী নিজেও ছাত্র ছিলেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি-কমিটিকে পালটা প্রশ্ন করে ততদিনে সেখানকার কিংবদন্তী। সে প্রশ্ন ছিল: ‘আমি আপনাদের কাছে থেকে কী শিখব বলে আশা করছি, আপনাদের এ প্রশ্নের বদলে, আপনাদের কাছে আমার জিজ্ঞাস্য, আপনারা আমায় কী শেখাবেন বলে আশা করেন যা থেকেআমি লাভবান হব?’ মাঝপথে তাঁর পড়াশোনায় ইতি টানা এবং ‘কবিতা-পরিচয়’- কী ভাবে আধুনিক কবিতা পাঠ করতে হবে সেই সংক্রান্ত মাসিক পত্রিকা প্রকাশ সে সময়ের ঐতিহাসিক ঘটনা।
-
পরিব্রাজক শিল্পী অথবা রঙের নতুন গল্পকার
লুসিফার লায়লা
আঁকিয়ে চরিত্রটি আমাদের প্রাচীনতম । জীবনে কখনও ছবি আঁকেননি এমন মানুষ পাওয়া অসম্ভব নয়, দুষ্কর। বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অবস্থা এবং অবস্থানগত বাস্তবতায় আঁকিয়ে সত্তাটি বেশির ভাগের মিলিয়ে যায়। কারও কারও সে চরিত্রটি ঘুমিয়ে থাকে জেগে ওঠার বিপুল সম্ভাবনায়। শৌখিন চিত্রকরদের বিশেষ কারও ক্ষেত্রে এই ঘুম ভাঙা চিত্রকর সত্তাটি ফেরে দারুণ সম্ভাবনা নিয়ে । রবীন্দ্রনাথ তার অন্যতম উদাহরণ,শুরু করেছিলেন সত্তর বছর বয়সে! সত্তরে শুরু করে বিরামহীন এঁকেছেন, বলা বাহুল্য সেইসব চিত্রকলা আমাদের আধুনিক চিত্রকলার দিক নিদর্শন দিয়েছে কেবল তা নয়, এগুলো আমাদের শিল্পের অসামান্য সম্পদ। শিল্পী অমরেন্দ্র চক্রবর্তীও ছবি আঁকা শুরু করেছেন সত্তর বছর বয়সে। রবীন্দ্রনাথের বয়সটাই তিনি বেছে নিয়েছেন ছবি আঁকার জন্যে তা নয়। এই বয়সে দাঁড়িয়ে তাঁর ছবি আকার মন সপ্রতিভ হয়েছে, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মিলে যাওয়াটা কাকতলীয়। দীর্ঘ দিনের নানান অভিজ্ঞতার পলি জমে তাঁর ভেতরটা যেভাবে তৈরি হয়েছে তারই ছাপ পড়েছে তাঁর আঁকা ছবিতে।